একজন আবুল কাশেম

নাটোর প্রতিনিধি: নাটোরে যাদের ঘরে ঈদ আসে না এমন অসহায় দরিদ্র ১০ হাজার মানুষের মুখে হাসি ফুটিয়েছেন একজন আবুল কাশেম। নাটোর শহরতলির দত্তপাড়া এলাকার প্রচারবিমুখ এই মানুষটি নীরবে নিভৃতে জেলার হাজারো মানুষের কল্যাণে চালিয়ে যাচ্ছেন তার নানা কর্মকাণ্ড। সবার সহযোগিতা পেলে তিনি ভবিষ্যতে নাটোরে একটি মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল গড়ে তুলতে চান। জানা গেছে, মধ্যবিত্ত পরিবার থেকে উঠে আসা আবুল কাশেম ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে রসায়নে উচ্চতর ডিগ্রি নিয়ে প্রথমে কিছুদিন চাকরি করে পরে ব্যবসা শুরু করেন। শিল্পপতি আবুল কাশেম নিজে অর্থশালী হওয়ার পর থেকেই নিজের জেলার মানুষের বেকারত্ব ও অভাব দূর করতে নানা পদক্ষেপ নেন। তবে কখনও এসব পদক্ষেপ তিনি প্রচারের চেষ্টা করেননি। এবারের ঈদে তিনি নিজে এবং নাটোর সদর উপজেলার ১২ জন ইউনিয়ন পরিষদ চেয়ারম্যান ও সব ইউপি সদস্যদের মাধ্যমে নাটোরে যাদের ঘরে ঈদ আসে না এমন অসহায় দরিদ্র ১০ হাজার মানুষের মুখে হাসি ফোটাতে তাদের উন্নত মানের ১০ হাজার শাড়ি লুঙ্গি দিয়েছেন। তিনি নাটোরে খামারবাড়ি ও গাজীপুরে শিল্প কারখানা স্থাপন করে হাজারো মানুষের কর্মসংস্থানের ব্যবস্থা করেছেন। এর আগে তিনি এলাকার দুইশ’ যুবককে বেকারত্ব ঘোচাতে নিজের খরচে মালয়েশিয়া পাঠিয়েছেন। তারা সবাই বর্তমানে মালয়েশিয়া থেকে পরিবার ও দেশের উন্নয়নে কাজ করে যাচ্ছে। এছাড়া একই সময়ে তিনি নাটোর সদর উপজেলার দুইশ’ অতি গরিব দুস্থ অসহায় মানুষকে সাবলম্বী করতে প্রত্যেককে এককালীন ১০ হাজার করে টাকা অনুদান দিয়েছেন। নিম্ন মধ্যবিত্ত শতাধিক কৃষককে তিনি হালের বলদ কিনে দিয়েছেন। তিনি এলাকার অভাবী অসহায় মানুষের মুখে হাসি ফোটাতে নীরবে নিভৃতে চালিয়ে যাচ্ছেন তার সংগ্রাম। ধর্মীয় শিক্ষা বিস্তারে চারটি আবাসিক মাদরাসাকে কয়েক বছর যাবৎ তিনি প্রতি মাসে ২০ হাজার টাকা করে অনুদান দিয়ে যাচ্ছেন। বিভিন্ন মসজিদের উন্নয়নেও তিনি কাজ করে যাচ্ছেন। শুক্রবার আট হাজার মানুষের সুশৃঙ্খল বিশাল ইফতার মাহফিলে তিনি এবার এসব শাড়ি ও লুঙ্গি বিতরণ করেন। নাটোর-৩ আসনের সাবেক সংসদ সদস্য অধ্যাপক কাজী গোলাম মোর্শেদ, নাটোর চেম্বার অব কমার্স ও নাটোর প্রেস ক্লাবের সাবেক সভাপতি আবদুল মান্নাফ ও নাটোর জেলা বিএনপির সহ-সভাপতি শহিদুল ইসলাম বাচ্চুসহ এলাকার অনেক গণ্যমান্য ব্যক্তি এ সময় উপস্থিত ছিলেন। আবুল কাশেমের দেয়া শাড়ি ও লুঙ্গি পেয়ে দত্তপাড়া এলাকার বৃদ্ধা আম্বিয়া বেগম ও বড়াইগ্রামের বৃদ্ধ রইস আলী বলেন, ‘বাবা জীবনে মেম্বার চেয়ারম্যানদের কাছ থেকে কিছু পাইনি। এই বাবাজী দিয়েছে, আল্লাহ তার ভালো করুক।’ বিনা খরচে মালয়েশিয়া যাওয়া দত্তপাড়া গ্রামের আবুল হোসেনের পিতা আমিন উদ্দিন ও ইসলাবাড়ী  গ্রামের তাহের মিয়ার পিতা সমির মিয়া বলেন, ‘বাবা অভাবের সংসারে দু’বেলা দু’মুঠো ভাত খেতেই পেতাম না। সেখানে নিজে টাকা দিয়ে ছেলেকে মালয়েশিয়া পাঠাবো এমন সাধ্য আমার ছিল না। কাশেম বাবাজী বিনা খরচে আমার ছেলেকে বিদেশ পাঠিয়ে আমার অভাবের সংসারে সুখ এনে দিয়েছে।’ আবুল কাশেমের এসব কর্মকাণ্ডে এলাকায় চলা নানা জল্পনা কল্পনা  সম্পর্কে জানতে চাইলে তিনি বলেন, তার মনে এখনও কোন রাজনৈতিক অভিলাষ জন্ম নেয়নি। তিনি তার সাধ্যমতো এলাকার অতিদরিদ্র অভাবী মানুষের মুখে হাসি ফোটাতে চান। সবার সহযোগিতা পেলে ভবিষ্যতে নাটোরে একটি মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল গড়ে তোলার স্বপ্ন দেখেন তিনি।

http://www.mzamin.com/details.php?nid=MTgwMjI=&ty=MA==&s=MTk=&c=MQ==

জাহেদুরের বৃক্ষপ্রেম

দৈনিক ইত্তেফাক : ১২/০৮/২০১২

রাজশাহীর বাগমারা উপজেলার সোনাডাঙ্গা গ্রামের বৃক্ষপ্রেমিক জাহেদুর রহমান ইকবাল। ছাত্র জীবন থেকেই বরেন্দ্র অঞ্চলের গাছপালা ও পরিবেশ নিয়ে কাজ করতেন। সেই সাথে বরেন্দ্র অঞ্চলের বিভিন্ন স্থানে বৃক্ষরোপণ ও পরিবেশবান্ধব বনায়নে শত শত কৃষক পরিবার ও জনসাধারণকে উদ্বুদ্ধকরণের কাজ করছেন তিনি।

রাজশাহী অঞ্চলকে মরুভূমির হাত থেকে রক্ষা করতে ব্যাপক বনায়ন প্রয়োজন। একথা ভেবেই নিজ খরচে যেখানেই সুযোগ পান সেখানেই গাছ লাগান জাহেদুর। রাজশাহীর বাগমারা, মোহনপুর ও নওগাঁর আত্রাই উপজেলায় এক লাখ ১০ হাজার স্কয়ার ফিট দেয়াল লিখন, স্থানীয় পত্রপত্রিকায় বিজ্ঞাপন প্রদান ছাড়াও গেঞ্জি, দেয়াল ঘড়ি ও ক্যালেন্ডার জনসাধারণের মাঝে বিতরণ করে বনায়নের জন্য প্রচারণা চালিয়ে আসছেন তিনি ।

১৯৭৮ সাল থেকে এ পর্যন্ত তিনি নিজ খরচে প্রায় ৭ লাখ ৫০ হাজার বৃক্ষরোপণ করেছেন। রাজশাহী ও নওগাঁ জেলার বিভিন্ন উপজেলার দুই শতাধিক সরকারি বেসরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়, ৮০টি উচ্চ মাধ্যমিক বিদ্যালয়, শতাধিক কলেজ ও মাদ্রাসাসহ আরো অর্ধশতাধিক হাট, বাজার, রাস্তাঘাট, খেলার মাঠ, গোরস্থান ও ঈদগাহ ময়দানে নিজস্ব উদ্যোগে বৃক্ষরোপণ করেন। চলতি মৌসুমে তিনি এক লাখ বৃক্ষরোপণের পরিকল্পনা হাতে নিয়েছে। ইতোমধ্যেই চারা সংগ্রহ ও বৃক্ষ রোপণের কাজ চলছে। এরই মধ্যে রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ে ৫৯ প্রজাতির ফলজ, বনজ, ঔষধি ও ফুলজাতীয় গাছের চারা রোপণের কাজ শেষ হয়েছে। স্থানীয়ভাবে জাহেদুর ‘বনবন্ধু’ খেতাব পেয়েছেন। এলাকায় তিনি বনবন্ধু জাহেদুর নামেই পরিচিত।

পুষ্টি বাড়ির গল্প

গ্রামের নাম চাঁনপুর। এ গ্রামের আদর্শ কৃষক মোঃ শহর আলী। প্রায় দু’একর জমি নিয়ে শহর আলীর বাড়ি। সবুজ পাছপালায় ঘেরা সুদৃশ্য এ বাড়িটি দেখলে যেকোনো মানুষেরই চোখ জুড়িয়ে যায়। ওই এলাকায় বাড়িটি ‘পুষ্টিবাড়ি’ নামে পরিচিত।

 

বাড়িটিতে রয়েছে ৫টি দুধের গাভী, ৪০০ হাঁস-মুরগির একটি খামার। এক বিঘা জায়গার উপর কাটা পুকুরে রয়েছে নানা রকম মাছ। আর বসতবাড়ির অঙিনায় চাষ হয় বিভিন্ন প্রকার শাকসবজি। এ বাড়িতে আরো আছে আম, জাম, কাঁঠাল, লিচু, সফেদা, বেল, নারকেল, কলা, পেঁপে, লেবু, পেয়ারা, কুল ফলের সমন্বয়ে একটি দৃষ্টিনন্দন ফলের বাগান।

 

স্ত্রী রাজিয়া বেগম আর দু’ছেলে এক মেয়ে নিয়ে শহর আলীর সুখের সংসার। পরিবারের চাহিদা মেটে বাড়িতে উৎপাদিত এই সব টাটকা জিনিসে। সারা বছরই তার বাড়িতে পাওয়া যায় গরুর দুধ, হাঁস-মুরগির ডিম, মাছ, মাংস, শাকসবজি ও ফলমূল।

 

নিজের গ্রাম ছাড়া পাশের গ্রামের মানুষ শহর আলীর বাড়ির গরুর দুধ, হাঁস-মুরগির ডিম ও হাঁস-মুরগি, পুকুরের মাছ এবং বসতবাড়ির আঙিনায় উৎপাদিত শাকসবজি ও ফলমূল কিনে নেন। এছাড়া স্থানীয় বাজারেও তিনি বসতবাড়ির কৃষিপণ্য বিক্রয় করেন। এর থেকে উপার্জিত অর্থ দিয়ে শহর আলী সংসার চালান। তার ছেলেমেয়েরা সবাই লেখাপড়া করে। আর অবসর সময়ে বাবা মাকে বসতবাড়ির খামারের কাজে সাহায্য করে। শাকসবজি ও ফল বাগানে পানি সেচের জন্য শহর আলীর বাড়িতে পুকুর ছাড়াও রয়েছে ২টি টিউবওয়েল। বাগানে পানি সেচ ছাড়াও তিনি খাওয়া গৃহস্থালীর সব কাজে টিউবওয়েলের আর্সেনিকমুক্ত বিশুদ্ধ পানি ব্যবহার করেন।

 

শহর আলী ও তার স্ত্রী রাজিয়া বেগম জানান, তারা গৃহস্থালীর প্রতিদিনের আবর্জনা যেখানে সেখানে না ফেলে বসতবাড়ির সামান্য একটু দূরে গো-শালার কাছে এবং বাড়ির পেছন দিকে ছায়াযুক্ত স্থানে গর্ত করে আদর্শ পদ্ধতিতে জৈব সার তৈরি করেন যা তারা ফলমূল ও শাকসবজি বাগানে ব্যবহার করেন। যার কারণে সবজি উৎপাদনে তাদের খরচ হয় কম।

 

গ্রামের দেশ বাংলাদেশ। এদেশের গ্রামগঞ্জে প্রায় দেড় কোটি বসতবাড়ি রয়েছে। বসতবাড়ির জমি সাধারণত উঁচু ও স্থায়ী হওয়ায় তা কৃষি খামারে রূপান্তরের জন্য একটি উপযোগী স্থান। তাই নারী, পুরুষ, ছেলেমেয়ে সবার চেষ্টায় দেশের প্রত্যেক বসতবাড়িকে পরিকল্পিতভাবে আদর্শ চাষি শহর আলীর মত ‘পুষ্টি বাড়ি’ তৈরির মাধ্যমে একটি পরিবার খুব সহজেই প্রতিদিনের পুষ্টি চাহিদা পূরণের সাথে সাথে আর্থিক স্বচ্ছলতা লাভ করতে পারেন, যা দেশের পুষ্টিগত অবস্থার উন্নয়ন ও গ্রামীণ দারিদ্র্য বিমোচনে ইতিবাচক অবদান রাখতে সহায়ক হবে।